বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের যে বিস্তার ঘটেছে তা এক সময় পাশ্চাত্যের দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকাকেও গ্রাস করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন তার এক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে স্বীকার করেছেন, পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। এ ছাড়া, আরো অনেক সূত্রে মধ্যপ্রাচ্যে দায়েশ সৃষ্টিতে আমেরিকার হাত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাসীদের দমনের নামে মার্কিন সরকার ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটায়। আমেরিকার এ আগ্রাসনের ফলে ওই মুসলিম দেশ দু'টিতে আরো সন্ত্রাসবাদের বিস্তার এবং ব্যাপক নৈরাজ্য ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সেনা কর্মকর্তারা সেদেশের নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আগাম হামলার কথা বলেন। অর্থাৎ টুইন টাওয়ারে হামলার পর এ অজুহাতে তারা পশ্চিমা এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে।
আমেরিকা ও তার মিত্ররা সন্ত্রাসীদের দমনের নামে ইরাক ও আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ শুরু করেছে তাতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়নি বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরো সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করা হয়েছে। যদিও বাহ্যিকভাবে আমরা দেখেছি আরব দেশগুলোতে সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটেছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১৫ বছরে আমেরিকা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। ইরাকে সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমেরিকা সেদেশে সেনা সমাবেশ করলেও পরবর্তীতে দায়েশ সন্ত্রাসীদের উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ইরাক জবর দখলকালে আমেরিকা জেলখানায় আটক কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু বকর আল বাগদাদিকে মুক্ত করে দেয়। বর্তমানে আইএসআইএল বা দায়েশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান হচ্ছে আবু বকর আল বাগদাদি এবং তার উত্থানের পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে। এরপর তারই নেতৃত্বে দায়েশ সন্ত্রাসীরা ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সারা বিশ্বে কুখ্যাত খুনি হিসেবে পরিচিত দায়েশ সন্ত্রাসীরা বর্তমানে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে তারা এখন অন্যান্য দেশেও তৎপরতা শুরু করেছে। ফলে সারা বিশ্বে দায়েশের ব্যাপারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্য দায়েশ বিরোধী জোট গঠন করেছে।
তবে দায়েশ বিরোধী যুদ্ধের কথা বলে ২০১৪ সালে মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সামরিক জোট গঠন করা হলেও এখন তাদের আসল লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ মার্কিন জোট ইরাক ও সিরিয়ায় বেসামরিক জনগণ ও স্থাপনার ওপর হামলা চালানো ছাড়াও দায়েশ সন্ত্রাসীদের অবস্থানের ওপর অস্ত্রের চালান নিক্ষেপ করেছে বহুবার। ফলে মার্কিন উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আরো জোরদার হয়েছে।
এ কারণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের কথা বলে আমেরিকার নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সামরিক জোটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।