IQNA

মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি গণজাগরণ শুরুর দশ বছর পর এ আন্দোলন এখন কোন্‌ পথে?

19:07 - December 17, 2020
সংবাদ: 2611971
তেহরান (ইকনা): আজ ১৭ ডিসেম্বর আরব বিশ্বে ইসলামি গণজাগরণ শুরুর পর দশ বছর পেরিয়ে গেল। দশ বছর আগে এ দিনে তিউনিসিয়ায় সবজি বিক্রেতা শিক্ষিত যুবক মোহাম্মদ বু আজিযি সরকারের বৈষম্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস আচরণের প্রতিবাদে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনায় সমগ্র তিউনিসিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলন শুরুর তিন বছর পর প্রেসিডেন্ট যেইন আল আবেদিন বিন আলী ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনসহ অন্যান্য আরব দেশে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল বিক্ষোভের মুখে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। লিবিয়ায়ও নয় মাসের গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয় এবং শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের হাতে লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হন। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসলামি গণজাগরণের ধাক্কায় ইয়েমেনের প্রথম প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা চাড়তে বাধ্য হন। যদিও তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত দেশগুলোর সমর্থন বজায় ছিল। অন্য আরব দেশগুলোর সরকারের শাসন ক্ষমতার ভিতও নড়ে ওঠে। এদিকে অনেক দেশে আন্দোলন স্তিতিমিত হয়ে গেলেও বাহরাইনে এখনো সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। অন্যদিকে ইয়েমেন যুদ্ধও অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ইসলামি গণজাগরণ শুরুর ১০ বছর পর এই জাগরণের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটাই প্রশ্ন।

আরব বিশ্বে সরকার বিরোধী ইসলামি গণজাগরণ শুরুর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো এবং ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা। যদিও তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন ও লিবিয়ার একনায়ক শাসকদের পতন ঘটেছিল এবং ইসলামি গণজাগরণের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়। কিন্তু এ পরিবর্তন সৌদি আরবের শাসকবর্গ ও তাদের পাশ্চাত্য সমর্থকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে প্রথম থেকেই তারা ইসলামি গণজাগরণকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লব বিরোধীদেরকে সমর্থন দেয়া শুরু করে এবং ইসলামি জাগরণ তথা এ বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য কঠিন ষড়যন্ত্র শুরু করে।

আমেরিকার সমর্থন নিয়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট এখনো ইয়েমেনের পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির প্রতি সমর্থন দিয়ে ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইরাক ও সিরিয়ায়ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে এবং মুসলিম দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে সমগ্র এ অঞ্চলকে চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নিজেদের পছন্দের রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিভিন্ন দেশের ইসলামি আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হচ্ছে ইয়েমেন। পছন্দের ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সৌদি আরব ইয়েমেনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। সৌদি আগ্রাসনে ইয়েমেনে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে।

তবে সৌদি আরব যত চেষ্টাই করুক না কেন গত এক দশকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে এবং অবস্থা সৌদি আরবের অনুকূলে নেই। এ অঞ্চলের ইসরাইল বিরোধী ও সন্ত্রাস বিরোধী ইসলামি প্রতিরোধ শক্তি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। সৌদি আরব কার্যত এ অঞ্চলে কেবল মার্কিন নীতি বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে এবং এর থেকে উপকৃত হচ্ছে দখলদার ইসরাইল।
সূত্র: পার্সটুডে

captcha