IQNA

আমেরিকায় ইসলামের ইতিহাস

19:04 - June 18, 2022
সংবাদ: 3472005
তেহরান (ইকনা): আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশটির শুরু থেকেই এখানে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব বিরাজমান।

এ বিষয়ে ইউএস ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের’ পাণ্ডুলিপি বিভাগের প্রধান ঐতিহাসিক জেমস হিউজটন একটি তথ্য উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ভার্জিনিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতার  প্রচারণার সময় থোমাস জেফারসন ‘মোহামডান’, ‘ইহুদি’ এবং ‘পেগান’ ধর্ম স্বাধীনভাবে প্রচার ও প্রসারের দাবি উত্থাপন করেন।
 
আমেরিকার ইতিহাসের শুরুর দিনগুলোতে ‘মোহামডান’ মানে মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীদের দেশটির জাতির পিতার পরিকল্পনার মধ্যে সংযুক্ত ছিল।
আমেরিকার জন্মের সময়কাল থেকে মুসলমানরা দেশটির বেশির ভাগ মুসলিম নাগরিক হিসেবে নয়, বরং দাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তখন ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, এই সংখ্যা ১০ থেকে ১২ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়। ‘আফ্রিকান মুসলিম স্নেইভস অ্যান্ড ইসলাম ইন এন্টিবেলাম আমেরিকা’-এর সম্পাদক ও পণ্ডিত রিকার্ড ব্রেন্ট টার্নার দাস মুসলমানদের সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে তিন লাখ বলে উল্লেখ করেন। তবে পরে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা দর্শনীয়ভাবে কমে যায়। দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হলেও ধর্মান্তরিত দাসরা আমেরিকার নাগরিকদের মতো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
 
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর এবং দেশটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সময়কালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে হাজার হাজার মুসলমান আমেরিকায় প্রবেশ করে। ওদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় শিল্প বিপ্লব শুরু হলে দেশটিতে আবারও বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়। তারা দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখে। এ সময় সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের অনেক খ্রিস্টান এবং মুসলমান আমেরিকায় নিজেদের স্বীয় বাসস্থান তৈরি করার সুযোগ পায়। তখন ইসলাম আবার দেশটিতে নতুনভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। তবে আমেরিকার সমাজে মুসলমানদের জীবন যাপন করা ততটা সহজ ছিল না। তারা নানা ধরনের বৈষম্য এবং সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। তখন মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তৎপর হয়। ১৯২০ সালের মধ্যে আরবপ্রবাসী মুসলমানরা আমেরিকার ডেট্রয়েট, পিটাসবার্গ, মিশিগান এবং ইন্ডিয়ানা শহরে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ সমাজ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। এ সময় মুসলমানরা অনেক মসজিদ নির্মাণ করে নামাজের ব্যবস্থা করে।
 
মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে বিশ শতকের প্রায় দুই যুগ ধরে এসব কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইসলামের মানবাধিকার ও উদারতার নীতির কাছে কালো মানুষগুলো মুক্তি ও স্বস্তির জীবন লাভ করে। তখন বহু সুন্নি ও শিয়া মুসলিম গোষ্ঠীর মুসলমানরা অনেক মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে পুরো আমেরিকায় ইসলাম প্রচারে ব্যাপৃত হয়।
 
মুসলমানদের এই অগ্রযাত্রা মূল আমেরিকান নীতিনির্ধারক ও সমাজবিদদের নজরে পড়লে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই ইসলামের গতি রোধ করার জন্য ১৯২৪ সালে ইউএস কংগ্রেস ‘এশিয়ান এক্সক্লুশন অ্যাক্ট ১৯২৪’ পাস করে। এই আইনের ফলে এশিয়ার দেশগুলোসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে নতুনভাবে মুসলমানদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। এতে আমেরিকায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি এবং ইসলামের অগ্রযাত্রা রোধ করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা সফল হয়।
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আমেরিকার লোকেরা সম্প্রদায় ও ধর্মীয় বিরোধে জড়িয়ে পড়লে এরপর নতুনভাবে একটি জাতীয় পরিচয়ের উদ্ভব হয়। এ সময় আফ্রিকান আমেরিকান বিশেষ করে আফ্রিকান আমেরিকান মুসলমানরা সমতা এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ‘সিভিল রাইট মুভমেন্টে’ ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকে, যা আমেরিকার অনেক মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত হতে আকৃষ্ট করে। ফলে ইসলামের প্রসার ঘটে। ১৯৬৫ সালে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড নেচারালাইজেশন অ্যাক্ট’ পাস হওয়ার পর ইসলামের প্রসারে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। এই নতুন আইনের ফলে আমেরিকায় নতুনভাবে প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ মুসলমান আগমন করে। এর ফলে ইসলাম আরো সম্প্রসারিত হয় এবং বিশ শতকের মধ্যে আমেরিকায় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
 
এর পর থেকে আমেরিকায় ইসলাম সবচেয়ে বিকাশমান একটি ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হয়।
 
লেখক : সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর,
 
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড,
 
বর্তমানে হেড অব বিজনেস অ্যান্ড শরিয়াহ সেক্রেটারিয়েট, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড
captcha